সার বিক্রিতে অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন রাজশাহীর কাঁকনহাটের কৃষকেরা। তাদের অভিযোগ, এলাকার বিসিআইসির ডিলার তাদের সরকার নির্ধারিত দামে সার দেন না। বেশি টাকা দিলে সার দেন, তা না হলে ফিরিয়ে দেন। আটকে রাখা সার তিনি পাচার করে দেন অন্য উপজেলায়।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) কৃষকেরা বিক্ষোভ করেছেন।বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তারা কাঁকনহাট বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
সমাবেশ থেকে কাঁকনহাটের বিসিআইসি ডিলার মেসার্স জি কে ট্রেডার্সের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানানো হয়। তা না হলে আরও বড় কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। সমাবেশে কাঁকনহাট ও আশপাশের এলাকার প্রায় দুই শতাধিক কৃষক অংশ নেন।
সমাবেশে এলাকার কৃষক মেহেদী হাসান বলেন, জি কে ট্রেডার্স পরিচালনা করেন তুহীনা আক্তার নামের এক নারী। তিনি বাড়তি টাকা ছাড়া সার দেন না। বাড়তি টাকা নেওয়ায় তিনি সার বিক্রির কোন রশিদ দেন না। বাধ্য হয়ে কৃষকদের সার নিতে হয়। আবার ৫ বস্তা সার চাইলে তিনি ১০ কেজি দিয়ে ফিরিয়ে দেন। আবার অনেককে সার না দিয়েই ফিরিয়ে দেন। আটকে রাখা সার তিনি বেশি তানোর উপজেলায় বেশি দামে সরবরাহ করেন।
কৃষকেরা জানান, সরকার নির্ধারিত ডিএপি সারের দাম এক বস্তায় ১ হাজার ৫০ টাকা। তুহীনা আক্তার নেন ১ হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। টিএসপির দাম ১ হাজার ৩৫০ হলেও তিনি নেন দেড় হাজার টাকা। এছাড়া ১ হাজার টাকার পটাশের দাম নেন ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি কৃষকদের জিম্মি করে বাড়তি টাকা নিচ্ছেন।
সমাবেশে মিনারুল ইসলাম নামের আকের কৃষক বলেন, ‘আমি নিজে চাষাবাদের পাশাপাশি ট্রাক থেকে মাল নামাই। নিজে শত শত বস্তা সার তুহীনা আক্তারের গুদামে ঢুকাই। কিন্তু দুদিন পরই তিনি বলতে থাকেন কোন সার নেই। তিনি নাকি বাইরে থেকে বেশি দামে সার আনেন। এ কথা বলে তিনি কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করেন।
সমাবেশে কৃষকেরা দাবি করেন, বাড়তি টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করলে নারী নির্যাতন মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। ফলে কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পান না।
তবে এবার তারা সাহস করে তুহীনার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তারা এখন মেসার্স জি কে ট্রেডার্সের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মেসার্স জি কে ট্রেডার্সের দোকানে গিয়ে তুহীনা আক্তার বলেন, আমি একজন মহিলা আমাকে রাত্রে ফোন দিয়ে বিরক্ত করে অনেকে সে কারনে আমি খারাপ ব্যবহার করি। আর আমার কাছে মাল থাকা পর্যন্ত কোর কৃষককে ফেরাইনা। তিনি আরও বলেন আমি সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করি। আমার নামে অভিযোগগুলো মিথ্যা, বানোয়াট একটা ষড়যন্ত্র।
গোদাগাড়ীর ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘গত সপ্তাহে জি কে ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে কৃষকদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এরপর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তদন্ত কমিটি গতকাল শুনানি করেছে। উভয়পক্ষের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।