শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সুরক্ষার পথে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক স্পর্শ করলো বাংলাদেশ। রাজশাহীতে অবস্থিত ন্যাশনাল অক্যুপেশনাল সেইফটি অ্যান্ড হেলথ ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নস্ট্রি)-এর সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হলো দেশের প্রথম পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা (ওএসএইচ) বিষয়ক গবেষণা সম্মেলন।
২ আগস্ট (শনিবার) সম্মেলনের আয়োজন করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডাইফ), যেখানে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও)।
“Safe Work, Sustainable Future: Bridging Research & Practice” প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এ সম্মেলনটি দেশের সকল শ্রমখাত জুড়ে নিরাপদ ও টেকসই কর্মপরিবেশ গঠনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, “শ্রমখাতের উন্নয়নে আমাদের সকল স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতা নিয়ে একসাথে কাজ করতে হবে।প্রত্যেক শ্রমিকের অধিকার রয়েছে শোভন কর্মপরিবেশে কাজ করার এবং দিনশেষে নিরাপদ ও সুস্থভাবে ঘরে ফেরার। আমাদেরকে তা নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের শ্রমখাতের উন্নয়নে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সরকার গবেষণাভিত্তিক নীতিনির্ধারণে কাজ করছে।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, “বর্তমানে বিশ্বের সেরা ১০টি গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে ৮টিই বাংলাদেশে অবস্থিত। এটি আমাদের জন্য বিরাট অর্জন। শ্রমখাতের নানা সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে নস্ট্রি গবেষণা করবে এবং এই গবেষণার তথ্য থেকে শ্রমখাতের কল্যাণে নীতি ও কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হবে। এই প্রতিষ্ঠান শুধু বাংলাদেশের শ্রমখাতেই অবদান রাখবে না, বরং এশিয়ায় শ্রমবিষয়ক তথ্য ও গবেষণার একটি কেন্দ্র হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হবে।”
সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত সচিব) ওমর মোঃ ইমরুল মহসিন।
তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে গবেষণাই হতে পারে কার্যকর নীতি ও প্রয়োগের পথপ্রদর্শক। গার্মেন্টস, ট্যানারি, জাহাজভাঙা শিল্প ও নির্মাণখাতসহ সকল ফরমাল ও ইনফরমাল সেক্টরে ঝুঁকি হ্রাসে নস্ট্রির বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও লক্ষ্যভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেশের শ্রমখাতের উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে।”
আইএলও’র টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট (লেবার ইন্সপেকশন অ্যান্ড ওএসএইচ) মি. রন জনসন বলেন, “বাংলাদেশের শিল্পখাতে দ্রুত প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ওএসএইচ ব্যবস্থার উন্নয়ন অত্যাবশ্যক। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা প্রতিরোধমূলক সংস্কৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমে শ্রমিকদের সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আইএলও বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
সম্মেলনে গবেষক, শিক্ষাবিদ, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, শিল্পপ্রতিষ্ঠান মালিক, সরকারি কর্মকর্তা ও উন্নয়ন সহযোগীসহ ২০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।
এতে ১১টি রিভিউকৃত গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয় এবং ওএসএইচ খাতের মূল চ্যালেঞ্জ ও উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
কনফারেন্সে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভিন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) প্রফেসর ড. রেহানা খানমসহ শ্রমখাতের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনবৃন্দ।