বাংলা কথাসাহিত্যে নিজের স্বকীয়তায় পাঠক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন শফিক রিয়ান। দীর্ঘদিন ধরে গল্প আর উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি পাঠককে ভিন্ন এক জগতে ভ্রমণ করিয়েছেন। এবার সেই সাহিত্যভ্রমণকে রূপ দিতে যাচ্ছেন নতুন আঙ্গিকে, চিত্রনাট্যের মাধ্যমে। গল্পকে শব্দের বাঁধন ছিন্ন করে নিয়ে আসছেন পর্দায়। এটি তার কাছে যেমন এক নতুন অভিজ্ঞতা, তেমনি এক রোমাঞ্চকর যাত্রাও। বর্তমানে দিন-রাত তার কাটছে নতুন চিত্রনাট্যের খসড়া লিখে। বর্তমান কাজ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বর্তমান আলো।
বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে?
কথাসাহিত্যের ঘর থেকে নাটকের অঙ্গনে প্রবেশ করছি, তাই দিনরাত কাটছে গল্প ভেবে ভেবে। কল্পনায় গল্পেরা কোলাহল করছে, আর আমি তাদের মঞ্চায়ন করার জন্য একটা সঠিক ভঙ্গিমা খুঁজছি।
কথাসাহিত্য থেকে নাটকে প্রবেশ, এই যাত্রাকে আপনি কতটা চ্যালেঞ্জিং মনে করেছেন?
কথাসাহিত্যে চিন্তা করার সীমানাটা অসীম। চিত্রনাট্যে সেই সুযোগটা নেই। এখানে ভাবতে হয় দৃশ্যে দৃশ্যে। একটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ কথাটা বলে শেষ করতে হয়। এই জায়গাটা খানিক চ্যালেঞ্জিং। এই চ্যালেঞ্জটাই আমাকে কাজ কাজ করতে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করছে।
প্রথমবার নাটকের জন্য চিত্রনাট্য লেখার অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?
প্রথমবার নাটকের জন্য লিখতে গিয়ে মনে হলো, আমি যেন নিজের গল্পকে ভিন্ন চোখে দেখছি। প্রতিটি সংলাপ শুধু কাগজে নয়, অভিনেতার কণ্ঠে বেজে উঠছে। মনে হচ্ছিল, কল্পনা আর বাস্তবতার জগৎ একসাথে এসে মিশে গেছে।
কথাসাহিত্যিক থেকে চিত্রনাট্যকার কেন হলেন?
কথার জাদু, শব্দের গাঁথুনি আমাকে সবসময় টানে, কিন্তু গল্পের দেহ দিতে হলে মঞ্চ বা পর্দাও দরকার। তাই কথাসাহিত্যিক থেকে চিত্রনাট্যকার হওয়ার ইচ্ছে আসলে গল্পকে আরেকটা নতুন জীবন দেয়ারই প্রয়াস।
নাটকের গল্প বাছাই করার ক্ষেত্রে কী কী বিষয় আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
গল্প বাছাই করার সময় আমি খুঁজেছি মানবমনের টানাপোড়েন, সম্পর্কের অনাবিষ্কৃত মোড়, আর সময়ের প্রতিধ্বনি। নাটক এমন হতে হবে, যেন তা দর্শককে নিজের ভেতর প্রশ্ন জাগায়।
আগামী বইমেলায় আপনার কোন বই আসবে? আসলে প্রস্তুতি কেমন?
আগামী বইমেলায় আমার নতুন উপন্যাস আসছে। এখনো শেষ মলাট ছোঁয়া হয়নি, তবে শেষ হলে সবাই দ্রুতই জানবে।
আপনার মতে, একজন কথাসাহিত্যিকের ভাষা কি চিত্রনাট্যে আলাদা শক্তি যোগ করে?
একজন কথাসাহিত্যিকের ভাষা চিত্রনাট্যে আসে এক ধরনের কবিতার ছোঁয়া নিয়ে। সংলাপ তখন হয়ে ওঠে আবেগের গোপন ভাষা। এটা আমি বিশ্বাস করি। অন্যদের ভিন্নমত থাকতে পারে।
পাঠক ও দর্শকের কাছে কেমন প্রতিক্রিয়া আশা করছেন আপনার প্রথম নাটক নিয়ে?
প্রথম নাটক নিয়ে আমি চাই দর্শক যেন গল্পের ভেতর নিজেদেরই খুঁজে পান। হাসি, কান্না, প্রশ্ন—সবকিছুরই একটু একটু প্রতিধ্বনি থাকুক তাদের হৃদয়ে।
সামনে কি নিয়মিত নাটক বা চিত্রনাট্যে কাজ করার পরিকল্পনা আছে?
নাটক ও চিত্রনাট্যের পথে নিয়মিত হেঁটে চলার ইচ্ছে আছে। তবে একঘেয়েমি নয়, প্রতিটি কাজে নতুনত্ব আনতে পারলেই কেবল আমি কাজ চালিয়ে যাব।
আগামীতে আপনার চিত্রনাট্যে কি কি কাজ আসছে?
আগামীতে সামাজিক দ্বন্দ্ব, ব্যক্তিগত নিঃসঙ্গতা আর মানবিক সম্পর্কের সূক্ষ্ম টানাপোড়েন নিয়ে কয়েকটি নাটকের ব্যাপারে ভাবছি। কিছু কিছু লেখাও শুরু করেছি, এবার শুধু মঞ্চে উঠবার অপেক্ষা।