নাট্যজগতে এবারের ঈদুল ফিতরকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে তিন শতাধিক নাটক, যার মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক ইতোমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ নাটক নিয়ে দর্শকের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। তবে ঈদ পেরিয়ে এক মাস পার হয়ে গেলেও নাটক প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদের নাটকে অশ্লীলতার উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও, সম্প্রতি প্রকাশিত এক নাটকের টিজার ঘিরে নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে।
নির্মাতা তৌফিকুল ইসলাম পরিচালিত ‘মোর দ্যান লাভ’ নাটকের টিজার প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। মেজবাহ উদ্দিন সুমনের গল্পে নির্মিত এই নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মুশফিক আর ফারহান ও কেয়া পায়েল। অতিথি চরিত্রে দেখা গেছে জনপ্রিয় অভিনেত্রী আইশা খান, সামিরা খান মাহি, অর্চিতা স্পর্শিয়া, ফারিন খান ও মারিয়া শান্তকে।
টিজার প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ কয়েকটি নাট্যভিত্তিক গ্রুপে সমালোচনার ঝড় ওঠে। দর্শকদের অভিযোগ, টিজারে প্রকাশিত কিছু দৃশ্য অশালীন এবং দেশীয় নাটকের পরিপ্রেক্ষিতে বেমানান। অনেকেই এই টিজারকে পশ্চিমা অশ্লীল সিরিজ ও নীল ছবির সঙ্গে তুলনা করেছেন। কেউ কেউ নেটফ্লিক্স’র জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘৩৬৫ ডেজ’ এর সঙ্গে তুলনা করে মন্তব্য করেছেন।
একটি জনপ্রিয় নাটক বিষয়ক ফেসবুক গ্রুপে গ্রুপ অ্যাডমিন মোহাম্মদ শরীফ মিয়া বলেন, “মোর দ্যান লাভ’ টিজারে কখনোই নাটকের ফ্লেভার ছিল না। টিজারে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও দৃশ্য ব্যবহৃত হয়েছে, যা আমাদের নাটকীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আইশা খান সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী হলেও এই নাটকে তার অংশগ্রহণ হতাশাজনক। ফারিন খানও হতাশ করেছে। অর্চিতা স্পর্শিয়াকে নিয়ে বলার মত কিছু নাই। মুশফিক আর ফারহান কোনদিন ক্লাস অডিয়েন্স গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। অদূর ভবিষ্যতে পাবে কিনা সন্দেহ। ফারহান কোনদিনই ভালো অভিনেতা ছিল না। যে কয়টা ভালো কাজ করেছে সেগুলোর বেশিরভাগ ক্রেডিট নির্মাতা কিংবা রাইটারদের। লুক, ডায়লগ ডেলিভারি, অভিনয়, কস্টিউম যাই বলি না কেন কোনটাই দেশীয় নাটকের অভিনেতার মত না।”
একই গ্রুপে অন্যান্য দর্শকরাও কড়া সমালোচনা করেন। কেউ কেউ বলেন, নাটকটি ‘১৮+ কনটেন্ট’ এর মতো, আবার কেউ বলেন, “ফারহান তো আগে থেকেই বিতর্কিত, তার নাটকে এসব থাকবে এটাই স্বাভাবিক।” সজীব নামের একজন বলেন, ‘এ নিয়ে মোট ৩০০+ বাংলা নাটক দেখেছি। সত্যি বলতে কখনো ভাবি নাই বাংলা নাটকে এ পর্যায়ে যাবে’। ফারহানের অভিনয়শৈলী ও উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
এছাড়াও একই গ্রুপে কয়েকজন প্রশংসা করে পোস্ট করলেও মন্তব্য ঘরে গেলে সেখানেও দেখা যায় সমালোচনার ঝড়। আবার প্রশংসা করা পোস্টের মন্তব্য ঘরেও সমালোচকদের কেউ কেউ টিজারটির দৃশ্যাবলিকে পর্নো ঘরানার কনটেন্টের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কিছু নেটিজেন অভিনেতার ব্যক্তিগত জীবন ও চরিত্র নিয়েও সমালোচনা করতে দেখা গেছে।
তবে বিতর্কের সত্ত্বেও নাটকের কিছু দৃশ্য বা নির্মাণগুণের প্রশংসাও এসেছে। কেউ কেউ বলেছেন, ‘ভিন্নধর্মী কনসেপ্ট নিয়ে কাজ করায় নির্মাতাকে সাধুবাদ জানানো উচিত, যদিও উপস্থাপনার ধরনে আরও যত্নবান হওয়া দরকার ছিল।’
অন্যদিকে, সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা আইশা খানকে এবারের ঈদে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাটকে দেখা গেছে। বর্তমানে সুনিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে শীর্ষ অবস্থানে থাকা আইশা দর্শকদের মন জয় করলেও, এই নাটকে তার অংশগ্রহণ নিয়ে ভক্তদের হতাশা স্পষ্ট। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, “আইশা খানের মতো একজন অভিনয়শিল্পী এমন নাটকে কাজ করবেন ভাবতেও পারিনি।”
ভারতীয় ১৮+ সিরিজের সঙ্গে তুলনা করে ‘বাংলা মিউজিক ভিডিও, নাটক ও বিজ্ঞাপন’ গ্রুপেও পোস্ট হয়েছে, যেখানে লেখা হয়েছে,
“বাংলা নাটকের বর্তমান অবস্থা দেখে ইন্ডিয়ান ১৮+ সিরিজ মনে হচ্ছে।”
‘মোর দ্যান লাভ’ নাটকের টিজার যেমন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, তেমনি বাংলা নাটকের কনটেন্ট ও উপস্থাপনায় সীমারেখা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। নির্মাতারা যেখানে নাটককে ভিন্নমাত্রায় নিতে চাচ্ছেন, সেখানে দর্শকের রুচি ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের দিকটিও সমান গুরুত্ব পাওয়া উচিত— এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।